• শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

ডেস্ক সংবাদ / ৭০ Time View
Update : শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চা পরিবর্তিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়, অথবা আধুনিক বাংলা সাহিত্য বলতে সাহিত্যের যে অংশগুলো বুঝানো হয়ে থাকে সেগুলোর সাথে কয়েক যুগ আগের সাহিত্য চর্চার বিষয়ের পার্থক্য রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলা সাহিত্যের বিবর্তনের এই ধারা প্রভাবিত হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু সাহিত্যিকদের মাধ্যমে।

চর্যাপদ পুথি

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম
বেগম রোকেয়া, মীর মশাররফ হোসেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী জীবনানন্দ দাশ স্বর্ণকুমারী দেবী
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হুমায়ুন আহমেদ

প্রাচীন যুগ
চর্যাপদ বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।[1] ধারণা করা হয় এটি খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে রচিত হয়েছিল। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন।

মধ্য যুগ
১২০৪ সালে গৌড়ে তুর্কি আক্রমণের সময় থেকে ঊনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ বলা হয়। তবে ১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়। সম্ভবত এ যুগে মসলমান ও তুর্কি আক্রমনের কারনে কবি সাহিত্যিকগন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। মনে করা হয় এ কারনে উল্লেখযোগ্য কোন সাহিত্য রচনা করতে পারেননি তাঁরা। এই সময়ের সাহিত্য মূলতঃ ধর্মীয় বিষয় নির্ভর ছিল। প্রথমদিকের সমস্ত রচনাই ছিল পদ্যমূলক – গদ্যমূলক রচনা চালু হয় অনেক পরে। তুলোট কাগজে লেখা পুথির মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা চলত।

বৈষ্ণব সাহিত্য
মূল নিবন্ধ: বৈষ্ণব সাহিত্য
বৈষ্ণব সাহিত্য: বৈঞ্চব মতকে কেন্দ্র করে রচিত বৈষ্ণব সাহিত্য। পঞ্চাদশ শতকে শ্রী চৈতন্য দেবের ভাব বিপ্লবকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব সাহিত্যের জন্ম হয়। বৈঞ্চব ধর্মের প্রর্বতক শ্রী চৈতন্য দেব কোন পুস্তক লিখে যাননি অথচ তাঁকে ঘিরেই জন্ম হয় এই সাহিত্যের। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাশ-এর সময়ে তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
মূল নিবন্ধ: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কবিতাগুলোর একটি হস্তলিখিত পান্ডুলিপি উদ্ধার করা হয় ১৯০৯ সালে। বিষ্ণুপুর শহরের নিকটবর্তী কাকিল্যা গ্রামের জনৈক দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি আবিষ্কার করেন। বড়ুচণ্ডীদাস নামের মধ্যযুগের এক কবি এটি রচনা করেন। চর্যাপদে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়, আবার শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে বাংলা ভাষা একটি নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে বলেছেন যে, “শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে যে বাংলা ব্যকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমানের নতুন বাংলা সম্পর্কে ধারণ দেয়।”

বিদ্যাপতি পদাবলী
মৈথিলী ভাষায় লেখা বিদ্যাপতি পদাবলী বাংলা কবিতায় বিশেষ প্রভাব রেখেছিল। বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিল কবি। বঙ্গদেশে তাঁর প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। অনেক বাঙালী কবি এই ভাষায় কবিতা রচণা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভানুসিংহের পদাবলীতে’ এই ভাষার ব্যবহার দেখা যায় |

চন্ডিদাসের পদাবলী
রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনীগুলো চণ্ডীদাসের লেখা পদাবলীতে বর্ণনা করা হয়েছে। “বাদু”, “দেভিজা”, “দিনা” ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এবং কখনো কখনো নাম ছাড়া এই পদাবলীগুলো পাওয়া গেছে।

সংস্কৃত ভাষা থেকে অনুবাদ
কৃত্তিবাস ওঝার শ্রীরাম পাঁচালি
মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণ বিজয়
মঙ্গলকাব্য

মূল নিবন্ধ: মঙ্গলকাব্য
একটি সম্পূর্ণ মঙ্গলকাব্যের ৫ টি অংশ থাকে। মঙ্গলকাব্য রচনা করা হয়েছিল মূলত মানসা এবং চান্দি এর পূজার স্রুতি বর্ণনা করার জন্য। মঙ্গলকাব্য বাংলা সাহিত্যের দুটি শাখায় বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সেগুলো হল:

মনসামঙ্গল
মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি কানাহরি দত্ত।

চণ্ডীমঙ্গল
চন্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র কালকেতু।

১৭৬০ সালে ভরতচন্দ্রের মৃত্যুর সাথে সাথে মধ্যযুগের সমাপ্তি হয়।

যুগসন্ধিক্ষণ
যুগসন্ধিক্ষণ মানে দুই যুগের মিলন। ১৭৬১-১৮৬০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে যুগসন্ধিক্ষণ বলে। এই সময়ে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের সংমিশ্রণ বৈশিষ্ট পাওয়া যায়। এ সময়ের সাহিত্যিক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। তাকে স্ববিরোধী কবিও বলা হয়। প্রথম দিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লিখলেও শেষ দিকে ইংরেজদের প্রশংসা করেছেন।

আধুনিক যুগ
১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ বলা হয়। এই যুগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:-

উণ্মেশ পর্ব (১৮০১-১৮৬০)
বিকাশ পর্ব (১৮৬১-বর্তমান)
বাংলা সাহিত্যের গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ ইত্যাদি আধুনিক যুগের সৃষ্টি। পদ্য ও ছড়া বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম রূপবন্ধ। তবে আধুনিক কবিতার প্রবর্তন হয়েছে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে।

তথ্যসূত্র
বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস, ক্ষেত্র গুপ্ত, গ্রন্থনিলয়, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ৪৪


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা