• শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

প্রবাসে নারীর কর্মজীবন ও নিরাপত্তা

মোশারফ হোসেন / ৭১ Time View
Update : বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪
প্রবাসে নারীর কর্মজীবন ও নিরাপত্তা

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অর্থনৈতিক খাতের এক বড় শক্তি। শুধু যে রিজার্ভ যুক্ত হওয়া তাই নয় বরং বহির্বিশ্বে দেশের নাগরিকের কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত হওয়াও বড় প্রত্যাশা। সেখানে সমসংখ্যক নারীদের বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ বেছে নেওয়া তাদের এক প্রকার সইচ্ছার দায়বদ্ধতা। সেটাই বিভিন্ন সময়ে হরেক গবেষণা প্রতিবেদনে ওঠে আসা প্রবাসী নারীদের ভিনদেশে কর্মসংস্থানের বিশেষ পর্যায়।

দেশেই সমসংখ্যক নারী পেশায়, কর্মে সময়ের গতিতে সামনে এগিয়ে চলাও সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সহায়ক শক্তি। সেখানে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে নারীদের শুধু স্বদেশেই কর্মযোগ নয় বরং বহির্বিশ্বের নানামাত্রিক বৈচিত্র্যময় পেশায় নিযুক্ত হওয়াও নতুন সময়ের অনন্য যাত্রাপথ।

সংগত কারণে প্রবাসী আয় থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে নারীদের অংশীদারিত্বও চোখে পড়ার মতো। বহু নারী শ্রমিক বিদেশে গিয়ে পছন্দসই পেশায় নিযুক্ত হয়ে কর্মসংস্থানে অভিষিক্ত হয় অভিবাসী প্রক্রিয়ায়। আমাদের দেশের নারীদের শ্রম বিনিয়োগ হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী মহিলা শ্রমিকদের যতো সমস্যা | চ্যানেল আই অনলাইন

সেখানে সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, কাতার, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, ওমান, ইতালি ও বাহরাইন। প্রবাসী বাঙালি নারী শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমে সে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক যে সমৃদ্ধ চেহারা সেখানে নির্যাতন, জুলুম আর শারীরিক নিপীড়ন নিত্যদিনের কর্ম যাতনা। যা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরগরম হতে দেরি হয় না। দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর অবসর সময় কাটানো প্রবাসী নারীদের অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো।

নাওয়া-খাওয়ার সুযোগই যেখানে সীমিত সেখানে অলস সময় পার করা এক অবিমিশ্র যাতনা তো বটেই। মানবিক মূল্যবোধ ধরাছোঁয়ার বাইরে। মনুষ্যত্বের চরম স্খলন পদে পদে। অনাকাক্সিক্ষত প্রতিবন্ধকতায় নিত্য জীবনের হরেক দুর্ভোগ পেশাগত সময়ের নিদারুণ বিপন্নতা। মানসিক ভারসাম্য হারানো থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করা ছাড়াও সর্বাঙ্গে ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়ানো প্রবাসী নারী শ্রমিকদের এক মর্মস্পর্শী যন্ত্রণাদায়ক অনুভব।

যা সব সময়ে বয়ে বেড়ানো নারী শ্রমিকের জীবন-মান কখনো স্বচ্ছন্দ্য আর সুখকর অনুভূতি যোজন যোজন দূরে কোথাও নিত্য পাশাবিক যন্ত্রণা। সেখানে অতি সামান্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়। সেখানে নিজের শ্রমশক্তি উজাড় আর উৎসর্গ করাও পেশাগত জগতের পরম দায়বদ্ধতাও বটে। এ তো গেল কর্মসংস্থানের যন্ত্রণাবিক্ষুব্ধ বিষময় আঁচড়া। যা অসহ্য হলেও মেনে নিতে হয় তাদের।

তার চেয়ে চরম জঘন্যভাবে প্রবাসী নারীদের বিভিন্ন দেশে পাচার প্রক্রিয়া সেটা আর এক হৃদয়বিদারক অভিসন্ধি বলাই যায়। সেখানে নারীদের সম্ভমহানিতা ছাড়াও অমানবিক পর্যায়ে হরেক আঁচড় বসানো পরিস্থিতির নিদারুণ নির্মমতা। ভাবতেও শিউরে উঠতে হয় প্রবাসী বাঙালি নারী শ্রমিকদের কত কাঠখড় পুড়িয়ে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা পাঠানো সত্যিই চরম বিষণœতার আকাল।

আর এমন সব অসহনীয় কোপানলের ফলশ্রুতি যা হয় তা অন্য এক নিষ্ঠুরতার চরম সর্বনাশ। মানসম্মান হারিয়ে শেষ অবধি আত্মহননের পথ বেছে নিতেও তারা পিছপা হয় না। প্রবাসী নারী শ্রমিকের মরদেহের সন্ধান পেতে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম তৎপর হয়। মাঝে মধ্যে এমন নারকীয় চিত্র সর্বসমক্ষে প্রকাশ-প্রচারও হয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া নির্যাতিত নারীরা লজ্জা, ঘৃণা আর অপমানে নিজ দেশে ফিরতেও পিছিয়ে আসে।

আবার দেশের সংশ্লিষ্টদের স্বজনরাও নির্যাতিতের পক্ষে দাঁড়াতে মানসম্মানের তোয়াক্কা করতে হয়। না থাকে আর্থসামাজিক স্বস্তি, না পায় পারিবারিক শান্তি। এমনকি নিজ দেশে ফিরে আসাও অনিশ্চিত পর্যায় হয়ে যায়। শারীরিক আর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। মানসিক শান্তি অপসৃত হয়, এমন কি নিজের প্রতি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা বিলুপ্ত হতে সময় লাগে না।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুট এজেন্সি’ (বায়রা)র গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝঁকিপূর্ণ পেশায় কর্মরত আছে। এরা মূলত গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ইউরোপসহ মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চুক্তিভিত্তিক পেশায় নিয়োগ পায়। চুক্তির সময়সীমা পার না হলে পালিয়ে আসারও কোনো সুযোগ থাকে না। সেখানে শুধু গৃহকর্ম নয় বরং গৃহকর্তার বাড়তি কাজকেও মেনে নেওয়া পরিবেশের দুঃসহ ন্যায্যতা।
লোমহর্ষক আর এক নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি তো বটেই। তাছাড়া আছে আরও বহু নিগ্রহের ঘটনাপঞ্জি। একটি পরিবারে কাজের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বিদেশে আসার পর দৃশ্যমান চিত্র উল্টো এবং হতবাক হওয়ার মতো। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একটা নয় বরং যৌথ পরিবারের গৃহকর্মী হিসেবে তাকে কাজ দেওয়া হয়েছে। যা অনেকটাই অজানা অবস্থায় থাকে। সরাসরি, প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ছাড়া জানা বোঝাও মুশকিল।

তাছাড়া দিনরাতের কাজের চাপে দেশে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও সেভাবে করতে পারা যায় না। আর এক নেতিবাচক অব্যবস্থা। ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের’ (রামরু) সমীক্ষা ও গবেষণা প্রতিবেদনে দৃশ্যমান হয় ভাগ্যবদল করতে যেসব নারী ভিনদেশে প্রবাসী শ্রমে যুক্ত হয় তাদের সবাই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের চরম শিকার।


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা