হাবিবুর রহমান যশোর জেলা প্রশাসকের ‘ডিসি পুলের’ জ্যেষ্ঠ চালক ছিলেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের চাকরি শেষে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) অবসরে যান তিনি। অবসরে যাওয়ার আগে বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ আজাহারুল ইসলাম নিজেই তাকে বাসায় নিয়ে যান।
বিকেলে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা শেষে জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বর থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক চালকের আসনে এবং হাবিবুর রহমান সাধারণত গাড়ির ভেতরে প্রশাসক যে আসনে বসেন সেখানে ছিলেন।
একজন গাড়িচালকের বিদায় বেলায় এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করাতে প্রশংসায় ভাসছেন জেলা প্রশাসক। বিদায়বেলায় এভাবে সম্মানিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হাবিবুর ও তার স্বজনরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান ১৯৮৫ সাল থেকে যশোর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে যশোরের জেলা প্রশাসকের গাড়ি চালিয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। জেলার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির নীরব সাক্ষী হিসেবে তিনি পরিচিত।
বিদায় শেষে নিজে গাড়ি চালিয়ে চালককে বাড়ি পৌঁছে দিলেন ডিসি
হাবিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি যশোর শহরের মিশনপাড়া এলাকায়। ২০২২ সালে জেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হন হাবিবুর রহমান।
এভাবে জেলা প্রশাসক তাকে সম্মানিত করবেন কখনো ভাবেননি হাবিবুর রহমান। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। আনন্দে আমি কেঁদে ফেলেছি।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমি জেলা প্রশাসক স্যারদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। চাকরিজীবনের শেষ দিনে স্যার চালকের আসনে বসে নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে আমার সম্মান অনেক গুণ বেড়ে গেছে। অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেটা ডিসি স্যারকে দেখে সবার শেখা উচিত।’
হাবিবুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, সততা ও নৈতিকতা প্রশ্নে আপসহীনতার যে দৃষ্টান্ত হাবিবুর স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। তিনি দীর্ঘ চাকরিজীবনে নিজেকে সততা ও কর্মনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তি ও চাকরিজীবনে হাবিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি।