বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। বৃহস্পতিবার সিআইডির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে’ এ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
‘সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।” চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্ত্রী রুকমিলা জামান গত ২০১৭ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। দুদকও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে।সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে দেশ-বিদেশে থাকা ৫৮০টি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। ওই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকর্পোরেটেড নামে একটি কোম্পানি খোলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।ওই বছর থেকে বিভিন্ন সময়ে ওই কোম্পানির নামে যুক্তরাষ্ট্রে নয়টি ফ্ল্যাট কেনা হয়।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসা করার জন্য দুবাইয়ে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই এবং জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে দুটি কোম্পানি খোলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামে আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় কিউ গার্ডেন্স ও বুটিক রেসিডেন্সে ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ দিরহামের দুটি ফ্ল্যাট কেনা হয় দুবাইয়ে।
সিআইডি বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সাবেক এই ভূমি মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আরব আমিরাতে ৬২০টি বাড়ি কেনেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ কোটি ডলার। “ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিজের ও স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামে যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে আটটি কোম্পানি খোলেন, যার স্থায়ী ও চলতি সম্পদের মূল্য ২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ডলার।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব কোম্পানি খুলে বিনিয়োগ করেছেন।” গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
এর জবাবে কয়েক মাস পর আওয়ামী লীগের এ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পাকিস্তান আমল থেকেই বিদেশে ব্যবসা করেন। তিনি সেই ব্যবসার উত্তরাধিকারী। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময়ও তিনি ব্যবসা করেছেন। যুক্তরাজ্যে তার আয়কর নথিও আছে।
কিন্তু সিআইডি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত যে ২১টি কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, সেই তালিকায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী বা তার পরিবারের কারও নাম নেই। ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী যে সম্পদ বিবরণী জমা দেন, সেখানেও তার বিদেশে থাকা সম্পদের কোনো তথ্য নেই।
সিআইডি বলছে, “অর্থ পাচার, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে একটি সম্পৃক্ত অপরাধ বিধায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।”